করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকবেন যেভাবে
বিশ্বের এক ভয়াবহ ভাইরাসের নাম হলো করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাস ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বকে গ্রাস করছে। এই করোনাভাইরাসে মুসলমানদের করণীয়-
০১. অবতরণিকাঃ
বর্তমান সময়ে ‘করোনা ভাইরাস’ সমগ্র পৃথিবীতে এক মহামারীর নাম। সমগ্র বিশ্ব আজ দিশেহারা। এর ছোঁয়া লেগেছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেও! এর ভয়ানক ছোবল থেকে বাঁচতে গণ সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা অতীব জরুরি। তাই প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের সকলের সমন্বয়ে টিম গঠন করে নিজ নিজ এলাকার লোকজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। প্রতিদিন মাসনূন দু‘আ, যিকির-আযকার পাঠ করতে হবে। যতদিন দেশ বিপদ মুক্ত না হয়। সমস্ত অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করে আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে মুনাজাত করতে হবে। আর এহেন পরিস্থিতি করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত ও ‘আমল সমূহ করতে হবে। হে আল্লাহ্ বাংলাদেশসহ সকল দেশকে এ বিপদ থেকে মুক্ত কর বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোকে রক্ষা কর।
০২. করোনা নামক মহামারীর কারণ সমূহঃ
২/১/ক. জলে ও স্থলের সকল বিপর্যয় মানুষেরই উপার্জনঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
মানুষের কৃতকর্মের কারণে সমুদ্রে ও স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোন কোন কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে। [সুরা রূম : ৪১]।
আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
জল ও স্থলের বিপর্যয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : অনাবৃষ্টি, ফসল ও ফলমূল উৎপন্ন না হওয়া, দুর্ভিক্ষ হওয়া, বেশি বেশি বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদ হওয়া, অনাকাক্সিক্ষত রোগ-মহামারি, মানব হত্যা, অগ্নিকাণ্ড, পানিতে নিমজ্জিত হওয়া, সব কিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদ। এসব আপদ-বিপদ মানুষের কর্মের ফসল তথা অন্যায়-অশ্লীল কাজে জড়িত হওয়া, মানুষের ওপর জুলুম করা, মন্দ কাজ থেকে বাধা না দেয়া, অপরাধের শরয়ী শাস্তি প্রদান না করা ইত্যাদিও দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার কারণ। [তাফসীর আহসানুল বায়ান]।
২/১/খ. মানুষের বিপদ-আপদ মানুষেরই কৃতকর্মের ফলস্বরূপঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَمَآ أَصٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُوا عَن كَثِيرٍ
তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন। [সূরা শুরা : ৩০]।
২/১/গ. আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করেঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
إِنَّ اللهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّٰى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ وَإِذَآ أَرَادَ اللهَ بِقَوْمٍ سُوٓءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ
নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেননা যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। কোন সম্প্রদায় সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তাহলে তা রদ করার কেহ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক (ওয়ালী) নেই। [সূরা রা‘দ : ১১]।
২/১/ঘ. যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিঃ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفٰحِشَةُ فِى الَّذِينَ ءَامَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِى الدُّنْيَا وَالْءَاخِرَةِ وَاللهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ্ জানেন, যা তোমরা জানো না। [সূরা নূর : ১৯]।
আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
فَاحِشَة (ফাহিশাহ্) শব্দের অর্থ হলো : নির্লজ্জতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি। যিনা-ব্যভিচার ছাড়াও দিবারাত্রি মুসলিম সমাজে সংবাদপত্র, রেডিও, টি-ভি, ভিডিও, সিডি, ইন্টারনেট প্রভৃতির মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। এমনিভাবে বাড়িতে টিলিভিশনের নানা কুরুচিপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে পরিবার ও ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে। অনুরূপভাবে অশ্লীলতা ও ইসলাম বিদ্বেষী কথায় পরিপূর্ণ কতেক দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের মাধ্যমে অশ্লীলতা সমাজের প্রতিটি রন্দ্রে রন্দ্রে পৌছে যাচ্ছে। [তাফসীর আহসানুল বায়ান]।
২/২. উম্মাতে মুহাম্মাদীসহ মানবজাতিকে পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হবেঃ
উম্মাতে মুহাম্মাদীসহ মানবজাতিকে কোন অপরাধে কি শাস্তি প্রদান করা হবে তা হাদীসে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। যথা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهٌ عَنْهُ قَالَ أَقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : {يَا مَعْشَرَ الْمُهَاجِرِيْنَ خَمْسٌ إِذَا ابْتُلِيْتُمْ بِهِنَّ وَأَعُوذُ بِاللهِ أَنْ تُدْرِكُوْهُنَّ لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ حَتّٰى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُونُ، وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِيْنَ مَضَوْا، وَلَمْ يَنْقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيْزَانَ إِلاَّ أُخِذُوا بِالسِّنِيْنَ وَشِدَّةِ الْمَؤُنَةِ وَجَوْرِ السُّلْطَانِ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يَمْنَعُوْا زَكَاةَ أَمْوَالِهِمْ إِلاَّ مُنِعُوا الْقَطْرَ مِنَ السَّمَاءِ وَلَوْلاَ الْبَهَائِمُ لَمْ يُمْطَرُوْا وَلَمْ يَنْقُضُوا عَهْدَ اللهِ وَعَهْدَ رَسُولِهِ إِلاَّ سَلَّطَ اللهُ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ غَيْرِهِمْ فَأَخَذُوا بَعْضَ مَا فِيْ أَيْدِيهِمْ، وَمَا لَمْ تَحْكُمْ أَئِمَّتُهُمْ بِكِتَابِ اللهِ وَيَتَخَيَّرُوْا مِمَّا أَنْزَلَ اللهُ إِلاَّجَعَلَ اللهُ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ .
আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বলেনঃ হে মুহাজিরগণ! তোমরা পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। যখন কোন জাতি ওযন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের উপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসীবত আর যখন যাকাত আদায় করে না তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
যদি ভূ-পৃষ্ঠি চতুস্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তাহলে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের উপর তাদের বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাশীন করেন এবং সে তাদের সহায়-সম্পদ সবকিছু কেড়ে নেয়। যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেন। [হাদীসটি ‘হাসান’ তাহক্বীক্ব, আলবানী। সুনান ইবনু মাযাহ ৪০১৯ (ই. ফা), বাব ; বাবুল উক্বুবাতি (অপরাধের শাস্তি) সহীহাহ ১০৬, ত্বাবরাণী ‘মু‘জামুল আওসাত্ব’ ৪৬৭১, হাকিম ৮৬২৩, ইবনু আবিদ দুনিয়া ‘উক্বুবাত’ ১১, সহীহুত তারগীব ৭৬৪]।
আনুসাঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ
قَوْلُهُ ﷺ : لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ حَتّٰى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُونُ - وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِيْنَ مَضَوْا
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উক্তি : যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী আকারে প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। এ উক্তি দ্বারাই বর্তমান সময়ের উল্লেখযোগ্য মহামারী হিসেবে ‘করোনা’-কে আখ্যায়িত করা যায়।
২/৩. উপরোল্লেখিত আয়াত সমূহ এবং হীদসের শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
উপরোল্লেখিত আল-কুরআনের ৪টি আয়াত এবং ১টি হাদীস থেকে ৭টি বিষয় শিক্ষা অর্জন করতে পারি। যথা :
- সর্বপ্রকার পাপাচার হতে বিরত থাকতে হবে। কেননা একজনের পাপের কারণে সমস্ত দুনিয়ার সৃষ্টিজীব কষ্ট পেতে পারে।
- দুনিয়াতে ফেতনা-ফাসাদ ও দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি মানুষের পাপের কারণে হয়ে থাকে।
- মানুষের বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, অসুস্থতা ইত্যাদির কারণে তার গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। তবে শর্ত হলো তাকে মু’মিন হতে হবে।
- প্রত্যেক জাতিকে নিজ চেষ্টার মাধ্যমে তার নেয়ামতকে পূর্ণ করে নিতে হবে।
- আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে ততক্ষণ ধ্বংস করেন না যতক্ষণ না নিজেদের অবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
- মুসলিম সমাজে মু‘মিনদের মধ্যে যিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রচার-প্রসার থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রকাশ্যে যিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অশ্লীলতা ও বেহায়পনার দরুন সমাজ ও জাতির উপর মহামারী হিসেবে যুগে-যুগে বিভিন্ন কঠিন দূরারোগ্য রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হয়েছিল, হয়েছে এবং আরো হবে।
০৩. মহামারী করোনা ভাইরাস-এর উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশঃ
পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন সময় নানা মহামারী পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। ১৮ হিজরীতে ‘ওমর (রাঃ)-এর শাসনামলে ‘আমওয়াস’ নামক প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সেই মহামারীতে ‘মু‘আজ বিন জাবাল, উবাইদা ইবনুল জাররাহসহ প্রায় ২৫ হাজার মুসলিম নিহত হন। এর পর ৭৯ হিজরীতে এবং গত ডিসেম্বর ২০১৯ ইং সনে চীনের ‘উহান’ শহরের একটি বন্যপ্রাণীর বাজার থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী মহামারী ‘করোনা ভাইরাস’ নামে। এ ছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে বিভিন্ন প্রকৃতিতে প্রাণঘাতি মহামারী আঘাত করেছে মানবজাতিকে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘করোনা’ নামক মহামারীতে আক্রান্ত আমাদের দেশ।
০৪. মহামারী করোনা ভাইরাসের পূর্ব সতর্কতাঃ
- সব ধরণের অন্যায়-অশ্লীল, হারাম ও গুনাহ থেকে বিরত থেকে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলা।
- নিজেদের পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করা।
- বিপদ-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য মহান স্রষ্টার কাছে দু‘আ করা।
- স্থলে ও জলের সকল বিপর্যয় মানুষের উপার্জন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। [সুরা রূম : ৪১]।
ঙ. মহামারি আক্রান্ত এলাকায় গমন না করা এবং সেখানকার অধিবাসীগণ সেখান থেকে বের না হওয়া। রাসূল (ﷺ) বলেছেন : ‘যখন তোমরা কোন অঞ্চলে মহামারী বিস্তারের সংবাদ শুনবে, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগ / মহামারী বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেও না। [সহীহ বুখারী ৫৭২৮]।
চ. এ বিশ্বাস রাখা যে, মহামারি মু‘মিনদের জন্য রহমত স্বরুপ। সে যদি এতে মারা যায় তাহলে সে শহীদের সম মর্যাদা লাভ করবে। [সহীহ বুখারী ৩৪৭৪, মুসলিম ১৯১৪, আহমাদ ২৩৮০৪, আবু দাউদ ৩১১১, নাসাঈ ১৮৪৬, সহীহ তারগীব ১৪০১]।
০৫. মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির ‘আমল সমূহঃ
- প্রতি রাতে সূরা বাক্বারাহ-এর শেষ দুই আয়াত তিলাওয়াত করা।
- প্রতি ফজর সালাতের পর সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাছ তিলাওয়াত করা।
- প্রতিদিন সাতটি করে ‘আজওয়াহ’ খেজুর (না পেলে যে কোন খেজুর) খাওয়ার চেষ্টা করা।
- আল্লাহর উপর আস্থা ও ভরসা করা এবং সর্বদা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করা।
- অধিক পরিমাণে তাওবাহ-ইস্তিগফার পড়া, দান-সাদক্বাহ করা, অযূ অবস্থায় থাকা, মাসনূন দু‘আ, যিকির-আযকার পাঠ করা।
০৬. মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির জন্য পঠণীয় দু‘আ সমূহঃ
এক নং দু‘আ :
اَللهم إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الأَسْقَامِ
O Allah, I seek refuge in you from leprosy, madness, elephantiasis, and evil diseases. হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট শ্বেত রোগ, পাগলামি ও কুষ্ঠ রোগসহ সকল জটিল রোগ থেকে আশ্রয় চাই। [সুনান আবূ দাউদ ১৫৫৪ (ই. ফা ও তাহক্বিক), মিশকাত ২৪৭০ (হা. এ), তিরমিযী, নাসাঈ]।
দুই নং দু‘আ : (সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করা) :
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
I seek refuge in the Perfect Word of Allah from the evil of what He created. আমি আল্লাহর নিকট পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের ওসিলায়, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। [সহীহ মুসলিম ২৭০৮, ২৭০৯, আবু দাউদ ৩৮৯৯]।
তিন নং দু‘আ : (সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করা) :
بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِىْ لَا يَضُرُّ مَعَ اِسْمِه شَىْءٌ فِى الْأَرْضِ وَلَا فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
In the Name of Allah, who with His Name, nothing in the earth or the heavens can cause harm, and He is the Hearing, the Knowing. আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান ও জমিনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন। [তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, সহিহুল জামে ৫৭৪৫]।
০৭. মহামারী করোনা ভাইরাসের পূর্ব সতর্কতা হিসেবে করণীয়ঃ
- সাবান ও পানি দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে।
- চোখ, নাক ও মুখ বারবার স্পর্শ করা যাবে না।
- সর্দি, কাশি হলে নাক ও মুখ ঢেকে রাখতে হবে। টিস্যু ব্যবহারের পর দ্রুত তা ফেলে হাত ধুতে হবে।
- সর্দি, জ্বর, কাশি, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ভ্রমণ করা যাবে না।
- গোশত ও ডিম সম্পূর্ণ সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
- অসুস্থ পশুপাখি খাওয়া যাবে না।
- কর্মস্থল ও কর্মস্থলে ব্যবহার করা জিনিস দিনে অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে।
- বাস, ট্রেন ও যে কোন গণপরিবহণে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। জ্বর দিয়ে এ ভাইরাসের সংক্রামণ শুরু হয়। পরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় ১ সপ্তাহ পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
- যে কোন অবস্থায় চিকিৎসকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।
“করোনা ভাইরাস”
আব্দুস সালাম হোসাইন আলী
শিক্ষক, ইনসাইট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, উত্তরা, ঢাকা।